একজন শিক্ষকের অন্তত উচ্চতর শিক্ষাগত যোগ্যতা থাকা বাঞ্ছনীয়।
কলেজকে অধিভুক্তি দিয়েছে। সেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের তিনটি অনুষদের মোট ছয়টি (৬) বিষয়ে অনার্স কোর্স চালু আছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সিলেবাস অনুসরণ করেই সেখানে শিক্ষার্থীদের পাঠদান করা হয়। শিক্ষক নিয়োগেও সেখানে বিশ্ববিদ্যালয় প্রত্যক্ষ ভূমিকা পালন করে। এই উদ্যোগও সাধুবাদযোগ্য। এসব বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে ভালো মানের বিজ্ঞানের শিক্ষক নিয়োগ দিতে পারলে দেশে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি শিক্ষা উন্নতি লাভ করবে।
বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত কলেজে সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকদের সমন্বয়ে নিয়োগ বোর্ড গঠন করে লিখিত ও মৌখিক উভয় পরীক্ষা নিয়ে মেধা যাচাই করে বিজ্ঞানের শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হলেও কোনো কোনো ক্ষেত্রে অর্ধযুগ পরে শিক্ষকদের এখন অনেক প্রশ্নের সম্মুখীন করা হচ্ছে, শিক্ষক নিবন্ধন সনদ চাওয়া হচ্ছে। এটা কতটা যুক্তিযুক্ত তা ভেবে দেখা দরকার। আমরা চাই যাতে বিজ্ঞান শিক্ষা কোনোভাবে ব্যাহত না হয়। বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয় ও অধিভুক্ত কলেজ পর্যায়ে বিজ্ঞানে শিক্ষক নিয়োগের সময় প্রার্থীর শিক্ষাগত যোগ্যতা, প্রকাশনা এবং লিখিত ও মৌখিক উভয় পরীক্ষাকে গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন। আমরা জানি, বিভিন্ন স্তরের এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান যেমন নিম্নমাধ্যমিক (অষ্টম শ্রেণি), মাধ্যমিক (দশম শ্রেণি), উচ্চমাধ্যমিক (একাদশ-দ্বাদশ) এবং স্নাতক (পাশ) স্তরের এমপিওভুক্ত পদে শিক্ষক নিয়োগের জন্য এনটিআরসি শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষার বিজ্ঞপ্তি দেয়।
যিনি যে বিষয়ের শিক্ষক হতে চান এবং যোগ্য, তিনি সেই বিষয়ের পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে উত্তীর্ণ হলে নিবন্ধন সনদ পান। এখন প্রশ্ন হলো, স্নাতক (সম্মান) স্তরের শিক্ষার্থীদের পাঠদানকারী শিক্ষক নিয়োগের জন্য এনটিআরসি কি কোনো নিবন্ধন পরীক্ষার বিজ্ঞপ্তি কখনো দিয়েছে? যদি না দিয়ে থাকে, তাহলে স্নাতক (সম্মান) স্তরের শিক্ষক হওয়ার জন্য আগ্রহী একজন প্রার্থী এই নিবন্ধন সনদ কোথায় পাবেন? আসলে স্নাতক (সম্মান) স্তরের শিক্ষার্থীদের পাঠাদানকারী একজন শিক্ষকের সংশ্লিষ্ট বিষয়ে বিশেষজ্ঞ হওয়া উচিত, সেই বিষয়ে উচ্চতর শিক্ষাগত যোগ্যতা ও প্রকাশনা থাকা দরকার।
<@সারা দেশে নতুন ও পুরোনো সরকারি কলেজগুলোতে বিজ্ঞানের যে শিক্ষকেরা স্নাতক (সম্মান) শ্রেণিতে পাঠদান করছেন, তাদের স্কলারশিপ ও শিক্ষা ছুটি দিয়ে পিএইচডি ও পোস্ট ডক করার সুযোগ দেওয়া উচিত। শিক্ষার্থীর চেয়ে শিক্ষকের যোগ্যতা বেশি না হলে মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করা যাবে না। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঠিকই পিএইচডি গবেষকদের অনেক গুরুত্ব দিচ্ছেন। পিএইচডি গবেষকদের উত্সাহিত করার জন্য এবং গবেষণায় আকৃষ্ট করার জন্য পূর্বে যে পরিমাণ বৃত্তি দেওয়া হতো, সেটা তিনি স্বেচ্ছায় বাড়িয়ে দিয়েছেন। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ও কয়েক বছর আগে একটি প্রজ্ঞাপনে জানিয়েছে, সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কোনো শিক্ষকের পিএইচডি ডিগ্রি থাকলে তাকে একসঙ্গে তিনটি ইনক্রিমেন্ট দেওয়া হবে। পৃথিবীর অনেক নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি ছাড়া অধ্যাপক হওয়াই যায় না। ঐ সব বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকের গবেষণা, প্রকাশনা ও পিএইচডি পোস্ট ডক অভিজ্ঞতাকে খুবই গুরুত্বের সঙ্গে মূল্যায়ন করা হয়। জ্ঞান পরিমাপের আসলে নির্ভরযোগ্য কোনো মাপকাটি নেই। শিক্ষকতা করার যোগ্যতা মাপা আসলেই কঠিন বিষয়। একজন আদর্শ শিক্ষক হতে হলে অনেক গুণাবলি থাকা প্রয়োজন। তবু প্রযুক্তিগত শিক্ষা দিতে গেলে একজন শিক্ষকের অন্তত উচ্চতর শিক্ষাগত যোগ্যতা থাকা বাঞ্ছনীয়। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি শিক্ষার পথ মসৃণ করতে প্রযুক্তিবান্ধব এই সরকারের শিক্ষা মন্ত্রণালয় নিশ্চয় যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। অভিজ্ঞ ও যোগ্য শিক্ষকদের অবশ্যই মূল্যায়ন করবে এটাই প্রত্যাশা করি।
লেখক : গবেষক ও শিক্ষক, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের পোস্ট ডক্টরাল ফেলো-২০২৩
আজকের আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url